বাগেরহাটে খাবার পানির তীব্র সংকটঃ

জনজীবনে চরম বিপর্যস্ত

 

অলোক মজুমদার (চিতলমারীবাগেরহাট)প্রতিনিধি 

 

বাগেরহাট জেলার প্রতিটি উপজেলায় সুপেয় খাবার পানির তীব্র সংকট চলছে।সংকট তীব্র আকার ধারণ করায় জনসাধারণকে এক প্রকার বাধ্য হয়ে পান করতে হচ্ছে আর্সেনিকযুক্ত টিউবওয়েল ও পুকুরের পানি।আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ে।দিনকে দিন হাসপাতাল গুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। গত বছর এ বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি।

বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন হলেও বর্তমানে নোংরা পানি পান করে প্রতিনিয়ত ডেকে নিয়ে আসচ্ছে মরনব্যাধি।সুপেয় পানির সংকট দেখা দিচ্ছে দিনকে দিন।যেসব বিশুদ্ধ পানির উৎস ছিল গ্রীষ্মের তাপাদহে প্রায় শুকিয়ে তলানিতে এসে পড়েছে।ভরসা শুধু স্মৃষ্টিকর্তার উপর।

বাগেরহাট জেলার কচুয়া, সদর,রামপাল,মংলা, শরনখোলা, মোড়েলগঞ্জ, ফকিরহাট, মোল্লাহাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চলছে সুপেয় খাবার পানির তীব্র সংকট। দুর দূরান্ত থেকে লোকজন খাবার পানি সংগ্রহ করে।

সমস্ত উপজেলার মতো চিতলমারীতে চলছে পানির চরম সংকট।আশে পাশের পুকুর,জলাশয় কিংবা খননকৃত নদীর তলানীতে এসে দাঁড়িয়েছে পানি।উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে দিন দিন বিশুদ্ধ পানির উৎস হারিয়ে যাচ্ছে। বাগেরহাট জেলায় বা স্থানীয় ভাবে পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম থাকায় এবং জারের পানির দাম বেশি হওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।চিতলমারীতে সরকারীভাবে পানি সরবরাহ না থাকায় জনসাধারণদের পাননোপযোগী পানি পান করতে হচ্ছে।তাতেই ভূগতে হচ্ছে ডাইরিয়া,আমাশয়,টাইফয়েডের মত রোগে।

চিতলমারী উপজেলার বিভন্ন ইউনিয়নে ছোট বড় ২০০উপর হোটেল রেস্তরা সহ সহস্রাধিক চাযের দোকান আছে।প্রতিদিন কয়েক হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয়।পানির যোগান স্থানীয় ভাবে মিটানোর ফলে দোকানদারদের নির্ভর হতে হয় স্থানীয় পুকুর বা টিউবওয়েলের উপর।সুযোগ কজে লাগিয়ে দুর দূরান্ত থেকে পানি সংগ্রহ করে ড্রাম ১২০টাকা এবং কলস প্রতি ৩০টাকা বিক্রি করতে দেখা যায়। তীব্র তাপাদাহে মানুষ থেকে প্রানীকুল পর্যন্ত বিপর্যস্ত।

চিতলমারী উপজেলা পরিষদের মধ্যে এবং চরবানিয়ারী ইউনিয়নে দুইটি বিশুদ্ধ পানির উৎস হাইসাওয়া পাম্প থাকলেও সঠিক রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে আকেজো।ব্যক্তি বা এনজিওর উদ্দ্যেগে নির্মিত পন্ডস স্যান্ড ফিল্টার(পি এস এফ),রেইন ওয়াটার হার্বেস্ট্রিং(RWH)বৃস্টির পানি সংরক্ষন প্রকল্প থাকলেও তা সীমিত। যে সব পুকুরে পিএসএফ ফিল্টার আবস্থিত তার পানি প্রায় শেষের পথে।

সরকারী উদ্দোগের কোন সু ব্যবস্থা না থাকায় এনজিও নির্মিত পুকুর ফিল্টারের উপর ভরসা সকলের।চিতলমারীর অনেক ইউনিয়নে ডিপ টিউবওয়েল হলেও চরবানিয়ারী, সন্তোষপুর ইউনিয়নে ডিপে লবন পানি ওঠায় ডিপ বসানো যায় না।৭০০০০টাকার প্যাকেজে পানি লবন হবে এ কথা জানান ডিপ টিউবওয়েল বসানো কম্পানীর ইন্জিনিয়ার।তিনি সন্তোষপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্বপন পোদ্দারকে বলেন মাননীয় এমপি মহোদয় যদি ১৫০০০০ টাকার প্রজেক্ট দেন তবেই কেবল সুপেয় খাবার পানি পাওয়া যাবে।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিভিন্ন এনজিও নির্মিত পুকুর ফিল্টারের ব্যবস্থা থাকলেও প্রায় পুকুর শুকিয়ে যাচ্ছে। সন্তোষপুর গ্রামে ব্রাক নির্মিত পুকুর ফিল্টারে আশে পাশের বিভিন্ন ইউনিয়নের লোক জন রাত ১২টা পর্যন্ত পানি নেয়।বিশেষ করে মহিলা -শিশুরা সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি নিলেও রাতে অটো,ভ্যান,সাইকেলে করে পানি নিতে আসে লড়ারকুল,নাছিরপুর,সাড়েচারানি,চৌদ্দহাজারী,আদিখালী,বাবুযানা,কাটিপাড়া গ্রামের পুরুষেরা।তারা বলেন দিনের বেলায় মহিলাদের জন্য সিরিয়াল পাইনা,তাই রাতে পানি নিই।

সন্তোষপুর গ্রামের মন্দির সংলগ্ন ফিল্টারের পাশে সন্তোষপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদ্বয় বলেন আমাদের ছেলে মেয়েরা এই ফিল্টারের উপর নির্ভরশীল। মাঝে মাঝে আমাদের ছেলে মেয়েরা লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করে। করনার কারনে এবছর বিদ্যালয় বন্দ থাকায় ফিল্টারের উপর চাপ অনেকটা কম।

ফিল্টারের স্বেচ্ছাসেবক অপূর্ব মজুমদার,সুব্রত মজুমদার, নরেশ মজুমদার, মধুসূদন বালা,অর্নব বালা,সনজীবন মজুমদার সহ অনেকে আভিযোগ করেন ব্রাক ফিল্টার করে দিয়েছে তবে যাবতীয় খরচ আমাদের এখন বহন করতে হয়। রাতেন আঁধারে পানি নিয়ে যায়, কোন খরচ দেয় না।বললে অনেক সময় কথাকাটা হয়।ফিল্টার পরিস্কার করতে আমাদের কিষান নিয়ে করতে হয়,তাতের মজুরি দিতে অন্যের সাহায্য নিতে হয়।ব্রাক কতৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করতে চাই না, তারা আমাদের জন্য একটু হলেও ফিল্টারের পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছে।মধুসূদন বালা বলেন,আমার পুকুরে পানব নাই।আমি নোটিশ টানিয়েছি কাল থেকে পানি দেওয়া বন্ধ।

সন্তোষপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নির্মল মন্ডল সাধু বলেন,সরকার থেকে বাজেটকৃত ডিপ টিউবওয়েল এই ইউনিয়নে বসানো হলোও পানি লবনাক্ত।এ বিষয়ে আমি অবগত আছি।যে পুকুরে ফিল্টার বসানো আছে তার গভীরতা কম,তাই পানি কম।আমি সরকারী পুকুর কাটানোর জন্য ইউনিয়ন পরিষদে জানিয়েছি।

বাগেরহাট জেলা সব উপজেলা এবংচিতলমারী উপজেলাবাসী এই সমস্যা আসু সমাধানের জন্য প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করে।